অধ্যায় একঃ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর জন্ম সাধারণ মানুষের কল্যাণে
অধ্যায় দুইঃ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন?
অধ্যায় তিনঃ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির বিকাশে পত্র-পত্রিকার ভূমিকা
অধ্যায় চারঃ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নীতিমালা করতে হবে সাধারণ মানুষের কল্যাণে
অধ্যায় পাঁচঃ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানীগুলো যেভাবে পরিকল্পনা করা উচিত
অধ্যায় ছয়ঃ মাল্টিলেভেল মার্কেটিংকে কর্মসংস্থানের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলতে হবে
অধ্যায় সাতঃ সাফল্যের জন্য ডাউনলাইনে সঠিক তথ্য ও সৎ পরামর্শ দিন
অধ্যায় আটঃ ইতিবাচক মনোভাব সাফল্যের পথ তৈরী করে
অধ্যায় নয়ঃ বাইনারী ম্যাজিক ও পদ্ধতি বিশ্লেষণ
অধ্যায় দশঃ ‘ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইন’ কি এমএলএম আইন তৈরীতে সহায়ক হবে ?
অধ্যায় এগারঃ সাফল্যের জন্য চাই অধ্যবসায়, কর্মপরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রম
অধ্যায় বারঃ মাল্টিলেভেল মার্কের্টিং পদ্ধতিতে হারবাল পণ্যের সম্ভাবনা
অধ্যায় তেরঃ আপনার পছন্দের তালিকায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাধান্য দিন
অধ্যায় এক
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর জন্ম সাধারণমানুষের কল্যাণে
মার্কেটিং বা বিপণনের একটি নতুন ও অনন্য আবিষ্কার মাল্টিলেভেল মার্কেটিং। আমেরিকার বিখ্যাত কেমিস্ট ডঃ কাল রেইন বোর্গ তার উৎপাদিত কৃত্রিম ভিটামিন (যা আয়োডিন ও ভিটামিন ‘ই’ এর সংমিশ্রনে তৈরী) বাজারজাত করনের জন্য সর্বপ্রথম বহুমাত্রিক পদ্ধতি এর ধারনা প্রবর্তন করেন। পাশাপাশি ‘ক্যালিফোনিয়া ভিটামিন, নামে একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন যা বিশ্বের প্রথম নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানী বলে স্বীকৃতি পায়। কারন ১৯৪০ সালের শুরুতে এটিই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যার বিক্রয় কার্যক্রম ছিল বহুস্তরে বিভক্ত, যে ধারনা হতে জন্ম নেয় বহুমাত্রিক বিপণন পদ্ধতি বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি। আমরা বিপণন বা মার্কেটিং এর বিভিন্ন ধরণ বা কৌশল দেখে থাকি বিশেষ কয়েকটি ধরণ হলোঃ (ক)সরাসরি বিপণন পদ্ধতি (Direct Selling)(খ) ট্রেডিশনাল পদ্ধতি (Traditional System) (গ) টেলি মার্কেটিং (Tele Marketing) (ঘ) ইন্টারনেট মার্কেটিং (Internet Marketing) ইত্যাদি। যে কোন বিপণন পদ্ধতির চেয়ে এমএলএম পদ্ধতির বেশ কিছু পার্থক্য লক্ষ্যণীয় তম্মধ্যে অসংখ্য মানুষের অংশগ্রহণের বিষয়টি অন্যতম অর্থাৎ যেখানে ক্রেতাই পরিবেশক বা কোম্পানীর প্রতিনিধি হিসেবে কাজের সুযোগ পায়। মধ্যস্বত্বভোগীদের সংখ্যা কমিয়ে বা এড়িয়ে কোম্পানী কর্তৃক লাভের অংশ কিংবা মার্কেটিং খরচ সাশ্রয় করে সাধারণ ক্রেতা বা পরিবেশকদের মাঝে বন্টন করা হয়, ক্রেতা বা পরিবেশকগণ টীম বা দল গঠন করে নিজেদের বিক্রয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। এভাবে অসংখ্য মানুষ পার্ট টাইম বা ফুল টাইম আয়ের পথ হিসেবে এ পদ্ধতিকে বেছে নেয়ার সুযোগ পায়। সংক্ষেপে আমরা দেখব কেন এমএলএম ব্যবসাকে জনকল্যাণকর বলা হয়ে থাকেঃ
- এমএলএম ব্যবসায় সরাসরি ক্রেতাগণ জড়িত থাকে বিধায় ক্রেতারা নিজেদের পছন্দসই পণ্য বেছে নেয়ার সুযোগ পায়।
- এমএলএম ব্যবসায় পণ্য বিক্রয়ের উপর কমিশন অর্জন করা যায় বিধায় অসংখ্য মানুষ এ ব্যবসা হতে আয়ের সুযোগ পায়।
- টীম বা দল গঠন করে দীর্ঘমেয়াদী ও রয়েলটি আয়ের সুযোগ থাকে বিধায় মাল্টিলেভেল বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতিকে অনেকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়ে কর্মসংস্থান খুজেঁ পেয়েছে।
- ট্রেডিশনাল কোম্পানীগুলো সামাজিক দায়িত্বপালনে (Social Responsibility) সচরাচর জড়িত থাকে কিন্তু নেটওয়ার্ক বা এমএলএম কোম্পানীগুলো সামাজিক দায়িত্বপালন অত্যাবশ্যক কারণ ক্রেতা সন্তুষ্টিই এমএলএম ব্যবসা মূল লক্ষ্য।
- এমএলএম কোম্পানীগুলো সরাসরি পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে জড়িত যার দরুন ব্যবস্থাপনা ও ক্রেতা-পরিবেশকদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত ও অভিযোগসমূহ নিষ্পত্তি হয়ে থাকে।
অধ্যায় দুই
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানীগুলোরবিরুদ্ধে এত অভিযোগ কেন?
ঊনিশশত পঞ্চাশের দিকে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লেও আমরা এর স্বাদ পেয়েছি ঊনিশশত নিরানব্বই এর দিকে। যারা তখন এদেশে ঐসব নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর সাথে জড়িত ছিলেন তারা নিশ্চয়ই এখন অনুধাবন করতে পারছেন তা ছিল এক ধরনের পিরামিড স্কীম। সেখান থেকেই শুরু এরপর অনেকেই রাতারাতি ধনী হওয়ার অন্যতম কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন ঐসব কৌশল। কাউকে দোষারোপ করতে পারছিনা কারণ আমরা জাতি হিসেবে খুবই দূর্ভাগা, কল্যাণকর বিষয়গুলো আমাদের কাছে অকল্যাণ হিসেবেই ধরা দেয়। যে মানুষগুলো নিয়মিত নিজেদের মৌলিক চাহিদা পূরণে হিমশিম খায় তাদের কাছে দ্রুত ধনী হওয়ার হাতিয়ার তুলে দেয় এমএলএম নামধারী প্রতিষ্ঠানগুলো। ‘সিস্টেম’ এর কথা বলে মানুষকে সুক্ষভাবে নিঃশেষ করে দেয় এসব প্রতিষ্ঠান। এখনো দেশের আনাচে কাঁনাচে অনেক কোম্পানী আছে যারা দু’চারটি কম্পিউটার, সফ্টওয়্যার আর পাইকারী বাজারের কিছু পণ্য কিনে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এদেশের সরল সাধারণ লোকগুলো যখন ৫০০/১০০০ টাকা নগদ হাতে পায় তখন হন্যে হয়ে নতুন গ্রাহকের পেছনে ছুটে বেড়ায়। মনে আছে নিশ্চয়ই আমরা অনেকেই ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকার পানির ফিল্টার ৫০০০ কিংবা আরো চড়া মূল্যে কিনেছি কারণ আমরা এমএলএম ব্যবসার কমিশন পেতে আগ্রহী ছিলাম। আমি তখন একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘আপনি ১০ টাকার পণ্য ২০ টাকা অর্থাৎ দ্বিগুণ মূল্য নিচ্ছেন এতে ক্রেতারা ক্ষুদ্ধ হয়না’ তিনি জবাবে বলেছিলেন ‘কমিশন দিতে হবে এটা তারাও জানে তাই উচ্চমূল্যেও পণ্য কিনছে’। তখন বুঝেছিলাম আমরা শুধু কমিশন পাওয়ার জন্য সচেতন, অন্য দশজন ঠকলো কি জিতলো তা আমাদের দেখার প্রয়োজন নেই। অভিযোগের শুরু এখান থেকেই, যারা বুঝতে পারলো এখানে প্রতারণা চলছে তারা সরে গেল আর যারা সুযোগ সন্ধানী তারা অন্যদের উৎসাহ (Motivation) দিয়ে ফায়দা লুটতে লাগলো। আপনি ইচ্ছে করলেই ভালো কিছু শুরু করতে পারবেননা। কারণ এখানে প্রথমে যারা সুবিধাভুগী ছিল তারাই বছরের পর বছর সুবিধাভোগ করছে। মানুষের কল্যাণের কথা যারা ভাবে তারা এখনো সাহস করতে পারেনা এমএলএম শুরুর । দশ বছর পর আমরা যেখানে থাকার কথা সেখান থেকে বস্তুত পিছিয়ে পড়েছি কারণ এমএলএম ব্যবসাকে মন্দ বলতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। কিভাবে এ সমস্যা থেকে বেড়িয়ে আসা যায় তার প্রচেষ্টা আমাদের ছিলনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদেরই বেশী দায়ী মনে করি যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে, নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার জন্য অন্যদের ব্যবহার করছে। বিগত দশ বছরে যেসব কারণে সাধারন মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে তার অন্যতম কারণ কিছু ঠক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফার এবং অবশেষে পলায়ন যেমনঃ গ্রেট ইন্টারন্যাশনাল। এমন দু’চারটি প্রতিষ্ঠানই যথেষ্ঠ মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির সর্বনাশের জন্য। যারা সঠিক এমএলএম এর কথা বলছে তারা কতটুকু সঠিক তা খতিয়ে দেখার মতো এখনো তেমন কেউ নেই আর এজন্যই প্রত্যেকে নিজেদের সঠিক বলে দাবী করছে। গড়পড়তা সব প্রতিষ্ঠানকে আমি মন্দ বলতে পারছি না কারণ মন্দের ভালও এখানে আছে। দেশীয় অনেক উৎপাদনমূখী প্রতিষ্ঠান বর্তমানে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করে বাজারে নিজেদের ভাল অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে এবং এসব প্রতিষ্টানের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ট্রেডিশনাল অনেক প্রতিষ্ঠান এমএলএম পদ্ধতিতে আসছে। এসব প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ সময় প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম হবে যদি সঠিক পথ বেছে নেয়। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর যে অপবাদ বা বদনাম যাই বলি তা রাতারাতি ঘুচানো যাবেনা বরং অভিযোগগুলো যাতে শুধরানো যায় সে প্রচেষ্টা করতে হবে। যেসব অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয় তাহলোঃ
ক) মাল্টিলেভেল বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং যদিও পণ্য বিক্রয়ের সাথে জড়িত অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো পণ্য ব্যতীত অদৃশ্যমান পণ্য নিয়ে (অগ্রীম/বুকিং নিয়ে) ব্যবসা করছে।
খ) অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রয় (সাধারনত যেসব পণ্য বাজারেও পাওয়া যায়)।
গ) অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান না হলেও অনেক এমএলএম কোম্পানী স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের আর্কষণীয় অফার দিয়ে ব্যবসা করছে।
ঘ) কমিশন প্রদানের জন্য যেসব কম্পেসেশন প্ল্যান তৈরী করা হয় তার বেশীর ভাগই অস্পষ্ট।
ঙ) স্বল্পমূল্যে বিদেশ থেকে পণ্য এনে চড়া মূল্যে বিক্রয়।
এধরনের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে মাল্টিলেভেল বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানীগুলোর ব্যাপারে। যে অভিযোগগুলো আমাদের পক্ষে সমাধান সম্ভব কিছুটা আন্তরিক হলে তবে এজন্য প্রথমে মানুষকে ঠকানোর মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হইবে। আপনাদের অনেকেরই মনে আছে প্রথম গ্রামীণ ফোনের মোবাইল প্রিপেইড সীম কিনেছেন দীর্ঘ লাইনে দাড়িঁয়ে সাত থেকে আট হাজার টাকায় আর এখন ১০০ থেকে ১২০ টাকায় সীম পাওয়া যায়। বিষয়টি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে ভাবুন এখন অনেক ক্রেতারা অনেক বেশী সচেতন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার দরুন প্রতিযোগিতার বিষয়টি এখন প্রাধান্য পাচ্ছে।
অধ্যায় তিন
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির বিকাশেপত্র-পত্রিকার ভূমিকা
খবরের কাগজ বা নিউজ পেপার-কে বলা হয় যে কোন জাতির বিবেক। আমরা একটি দিনও পার করতে পারিনা পত্রিকা ছাড়া। কিন্তু পত্রিকা খুললেই বেশীরভাগ নেতিবাচক খবর। এজন্য আমরাই প্রতীক্ষায় থাকি কোন্ দূর্ঘটনা, হিংসা-হানাহানি, হত্যা ইত্যাদি কেন ঘটল বা কিভাবে ঘটল তা জানার জন্য। সুখের খবর, শান্তির খবর বা ইতিবাচক খবর আমরা খুব কমই দেখি-শুনি, এটাও আমাদের নেহায়েত র্দূভাগ্য। যদি এভাবে চিন্তা করি আমাদের সমাজের অসংগতিগুলো তুলে ধরছে পত্রিকাগুলো তবে সেটিই সত্য। কিন্তু এর পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের উপায় চিহ্নিত করলে তা অবশ্যই ফলপ্রসু হতো। প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বলি যেমনঃ বিগত ৭-৮ বছর আমার চোখে পড়েনি এমএলএম বিষয়ে ইতিবাচক কোন্ খবর কোন্ পত্রিকায়। যে পদ্ধতিটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত সে বিষয়টি আমাদের জন্য কতটুকু কল্যাণকর বা কিভাবে এ পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায় তা কখনও কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। তবে কি ধরে নেব সারাবিশ্ব একটা মিথ্যে বিষয়ের পেছনে ছুটছে অথবা আমাদের জন্য এ পদ্ধতি অপ্রয়োজনীয়। আমরা যেহেতু একটা স্বাধীন গনতান্ত্রিক দেশের নাগরিক এজন্য আমাদের বলা, চলা এবং লেখা ইত্যাদির মধ্যে স্বাধীনতা রয়েছে কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমার ইচ্ছেমত আমি বলব বা লিখব। আমি কোন পত্রিকার সাংবাদিক বা কলামিস্ট হলেই যে কাউকে চোর বা প্রতারক বলতে পারিনা যতক্ষণ না দেশের আইন দ্বারা তা প্রমাণিত হয় (আমার জানা মতে)। আমাদের দেশে এমএলএম আইন নেই বিধায় কিছু প্রতিষ্ঠান এমএলএম এর নামে অসৎ উপায় অবলম্বন করছে তা সবার জানা, এজন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানকে প্রতারক বলে পত্রিকায় লেখার স্বাধীনতা মনে হয় দেশের আইনে (Law of Land) নেই। আপনি যদি কারো দ্বারা প্রতারিত হোন তবে অবশ্যই আইনের আশ্রয় নেয়ার অধিকার আছে। এমএলএম কোম্পানী দ্বারা প্রতারিত হয়েছে এমন কয়েকজনকে বাদী বানিয়ে আইনের আশ্রয় নিন, বিচার ব্যবস্থা আপনাকে সঠিক উত্তর দিবে, না হয় প্রয়োজনে আইন তৈরী করবে। আপনি যে প্রতিষ্ঠানকে প্রতারনামূলক প্রতিষ্ঠান বলছেন সে প্রতিষ্ঠানে হয়তোবা ৫/১০ লক্ষ মানুষ পরিবেশক হিসেবে কাজ করছে এর মানে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম আছে এবং যা আপনার লেখার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আমাদের সম্মানিত মন্ত্রীমহোদয়গণ যখন ঐসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যান নিশ্চিয় তারাও প্রতারণার সাথে জড়িত হয়ে যান কিংবা প্রতারণাকে সমর্থন করেন, কিন্তু আইন দ্বারা প্রমাণিত হলে অবশ্যই মন্ত্রীমহোদয়গণ ঐসব অনুষ্ঠানে যাবেননা অথবা তারা (প্রতারক প্রতিষ্ঠানসমূহ) সম্মানিত ব্যক্তিদের নিমন্ত্রণ করবেন না। দু’একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য পুরো সিস্টেমকে মন্দ বলা যায় না। জেনে লিখুন ধারণা করে লিখবেন না দয়া করে। আমরা বিশ্বাস প্রিন্ট মিডিয়া আমাদের ধ্যান-ধারণার ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটাতে পারে। আমাদের জীবন মানের যে ভয়াবহ দূর্গতি এসব বিষয়ে লেখুন। মৌলিক অধিকার নিয়ে লিখুন, মানুষের সম্মান পাবেন দোয়াও পাবেন। এমএলএম সিস্টেমকে মুখরোচক সংবাদ বানাবেন না। বরং এসব সংবাদ ঐসব প্রতিষ্ঠানের জন্য বিজ্ঞাপন হিসেবে কাজ করে।
অধ্যায় চার
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং নীতিমালা করতে হবেসাধারণ মানুষের কল্যাণে
আইন মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য। সরকার কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা করা হয় সাধারন জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনা করে। যদিও আমরা আইন ও নীতিমালার ব্যাপারে ততটা সচেতন নই তবুও যেসব বিষয়ের আইন নেই সে বিষয়গুলো সাধারণ মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির কোন আইন বা নীতিমালা নেই বিধায় এর সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি। যে যার মতো প্লান তৈরী করছে, যে যার মতো উচ্চমূল্যে পণ্য বিক্রয় করছে, বাজার থেকে বিনিয়োগের নামে টাকা তুলে নিচ্ছে। কোনটি পত্রিকায় লেখা-লেখির আগেই চম্পট দেয় আবার কোনটি পত্রিকায় লেখা-লেখির পর। অনেক প্রতিষ্ঠান নীতিমালা তৈরীর জন্য সরকারের নিকট আর্জি জানিয়ে আসছে দীর্ঘদিন। সর্বদিক বিবেচনা করে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে আইন বা নীতিমালা তৈরী করা হবে। মাল্টিলেভেল বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর মূলভূমিকা পালনকারী এর ক্রেতা বা পরিবেশকগণ, এজন্য ক্রেতা অধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে নীতিমালা বা আইন প্রণয়ন করতে হবে। তবে শুধূ আইন করলে হবেনা এর বাস্তবায়নের জন্য মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। অদ্যবধি যেসব প্রতিষ্ঠান দেশে এমএলএম পদ্ধতি অনুসরণ করে আসছে সেসব প্রতিষ্ঠানসমূহের মার্কেটিং প্লান, পণ্য মান যাচাই, কমিশন পর্যালোচনা, পরিবেশক সংখ্যা নির্ণয়, আয়কর প্রদানের দলিল পত্রাদি যাচাই বাছাই করে এবং যেসব ক্রেতা বা পরিবেশক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ প্রদান সাপেক্ষে লাইসেন্স বা অনুমতি প্রদান করতে হবে। তবেই এমএলএম এর প্রতি মানুষের বিশ্বাস বাড়বে। সরকারী নীতিমালার পাশাপাশি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের উদ্যোগে সমিতি বা সংস্থা গঠন করে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসাকে দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে দিয়ে সাধারন মানুষের নাগালে নিয়ে আসতে পারবে এবং বৈধ ও সঠিক পদ্ধতির অনুসরণের ফলে অবৈধ এমএলএম বন্ধ হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের ডিরেক্ট সেলিং কোম্পানী বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানী সমূহকে নিয়ন্ত্রণ করে এমন সংস্থা DSA (Direct Sales Association), যুক্তরাষ্টের প্রায় প্রতিটি এমএলএম বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানী এ সংস্থার সদস্য। এ সংস্থার মেম্বারশীপ পেতে হলে কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হয় যে নিয়মনীতিসমূহকে Code of Ethics বলা হয়। DSA এর বিশ্বব্যাপী যে সংস্থা কার্যক্রম পরিচালনা করে সেটিকে বলা হয় WDSA বা World Direct Sales Association. নীতিমালা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়মনীতি ও FTC (Federal Trade Commission) এর বিধিনিষেধগুলো অনুসরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছি। এছাড়া এশিয়ার চীন, মালয়শিয়া ও ভারতের কোম্পানীগুলো জন্য কি কি নিয়ম অনুসৃত হয় তা পর্যালোচনা করে আমাদের বিধিমালা প্রণীত হলে তা সর্বজন গৃহীত হবে।
অধ্যায় পাঁচ
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানীগুলো যেভাবেপরিকল্পনা করা উচিত
আইন বা নীতিমালা যাই হোক না কেন অবশ্যই তা সাধারণের কল্যাণে গঠিত হয়। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতির নীতিমালা বা আইন যতদ্রুত তৈরী হবে তা মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের কল্যাণে বয়ে আনবে। কিন্তু তা কখনই এমএলএম কোম্পানীগুলোর স্বার্থের পরিপন্থি হবেনা। যা মানুষের জন্য মঙ্গলজনক তা কখনোই আইনের দ্বারা বিঘ্নিত হয়না। যখন ভাল অবস্থান তৈরী হবে বা প্রতিষ্ঠান যখন আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা লাভ করবে তখন আইন অনুযায়ী কার্যক্রম কার্যক্রম পরিচালনা করবে এমনটি ভাবা অনুচিত। শুরু থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পযর্ন্ত একটি প্রতিষ্ঠান যেভাবে এগোনো প্রয়োজন তার একটি বিশেষ পরিকল্পনা/কৌশল তুলে ধরা হলোঃ
ক) যে পণ্যটি আপনি উৎপাদন করছেন বা যে পণ্যটি বাজারজাত করার জন্য একমাত্র আপনিই মনোনীত সে পণ্য/পণ্যগুলো সর্ম্পকে আপনাকে প্রথমে বাজার বিশ্লেষণ করতে হবে। নেটওয়ার্ক ব্যবসায় মানুষ আয় করতে পারবে বিধায় আপনার যে কোন পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করবে এমনটি ভাববেননা। যদি বিশেষ ও আর্কষণীয় নতুন কোন পণ্য হয় তবে অবশ্যই ভাল কিংবা প্রচলিত পণ্যে নতুন কিছু বৈশিষ্ট্য হলেও চলবে। শুধু কমিশন প্লান দিয়ে ক্রেতা/পরিবেশককে আপনি সন্তুষ্ট করতে পারবেননা কারণ নিত্য-নতুন আর্কষণীয় প্লান তৈরী করছে কোম্পানীগুলো। কিন্তু পণ্যের গুণাগুণ ও একক বৈশিষ্ট্যের জন্য আপনি দীর্ঘদিন আপনার অবস্থান সমুন্নত রাখতে পারবেন। যেমনঃ এমওয়ে কর্পোরেশন বিগত ৫১ বছর সমগ্র বিশ্বে শীর্ষস্থানীয় কোম্পানীর স্থান দখল করে আছে কিন্তু তাদের কমিশন প্লান অনেক পুরোনো বা সেকেলে। আমাদের দেশীয় এমএলএম প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আমার জানা মতে মডার্ণ হারবাল কোং গবেষণা ও উন্নত পণ্য প্রস্তুত করে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। আপনি নিত্য প্রয়োজনীয়, ঔষধী, কসমেটিক, ইলেকট্রনিক্স ইত্যাদি যে পণ্যই বেছে নিবেন পণ্যে আপনার দখল থাকতে হবে।
খ) আপনার পণ্য আছে এজন্য আপনি যে কোন পদ্ধতি বেছে নিতে পারেন ১. প্রচলিত বিপণনপদ্ধতি ২. নেটওয়ার্ক মার্কেটিং পদ্ধতি। যদি আপনি নিশ্চিত হউন যে, আপনি ক্রেতাদের শতভাগ (বা কাছাকাছি) সন্তুষ্ট করতে পারবেন এবং পণ্য নিয়ে বাজারে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন তবে আপনি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বেছে নিন। সাধারনত যে কোন উৎপাদনকারী উৎপাদনের পর মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণের প্রতি বেশী গুরুত্ব দিয়ে থাকেন কারণ বিপণনে ব্যর্থ হলে তার সবই ব্যর্থ। এমএলএম পদ্ধতিতে ক্রেতারাই ভোক্তা এবং পরিবেশকের কাজটুকু করে এজন্য তাদের (ক্রেতা) সন্তুষ্টিই আপনার সাফল্য। কি কি সুবিধা আপনি ক্রেতা বা পরিবেশকদের প্রদান করবেন সেটিই মূখ্য, লেফ্ট – রাইট সাজিয়ে মোটা অংকের কমিশনের প্রলোভন কখনও দীর্ঘস্থায়ী কমিশন প্লানের বৈশিষ্ট্য নয়। বিষয়টি এজন্য বলছি আমাদের দেশের প্রায় আশি ভাগ কোম্পানী বাইনারী প্লান অনুসরণ করে যা উন্নত বিশ্বের বিপরীত। কারণ আমরা আগে প্লান তৈরী করি পরে পণ্য খুজেঁ বেড়াই। পণ্যের উপর নির্ভর করে সহজ সাবলীল ও পরিবর্তনযোগ্য প্লান প্রস্তুত করুন- আপনার সাফল্য নিশ্চিত।
গ) আপনার পণ্যসামগ্রী ও চমৎকার কমিশন প্লান থাকার পর আপনাকে ক্রেতা বা পরিবেশকের বিভিন্ন সেবাসমূহের প্রতি নজর রাখতে হবে যেমন- বিক্রয়োত্তর সেবা, পণ্যের জন্য কমিশন, টীম গঠনার্থে প্রশিক্ষণ, প্রেষণামূলক প্রশিক্ষণ ইত্যাদি। যে বিষয়টি আমরা চর্চা করিনা তাহলো ক্রেতা/পরিবেশকদের অপিনিয়ন বা মতামত ও তাদের সাজেশন্স বা পরামর্শ; খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ তাদের জন্যই আপনার প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠা। আপনি কিছু লিডারকে সন্তুষ্ট রেখে বিক্রয় সমপ্রসারণ করবেন এমনটি সাময়িক সম্ভব হলেও দীর্ঘমেয়াদে সম্ভব হবেনা। আপনাকে সার্বজনীন চিন্তা করতে হবে অর্থাৎ ক্রেতা, পরিবেশক এবং লিডার প্রত্যেককে নিয়ে ভাবতে হবে। ক্রেতা সন্তুষ্টির বিকল্প নেই কারণ আপনার মূললক্ষ্য পণ্য বিপণন বা বিক্রয় বৃদ্ধি, যতবেশী বিক্রয় বৃদ্ধি পাবে ততবেশী পরিবেশকগণ কমিশন পাবেন এবং ইতিবাচক হবেন। আপনি যতকিছুই করুন না কেন পরিবেশকদের সুবিধা ও সেবাসমূহ প্রদানে ব্যর্থ হলে আপনার লক্ষ্যও ব্যর্থ হবে। শুধূ প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রেষিত করে কাজ আদায় করবেন এমনটি ভাববেননা। প্রশিক্ষণ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু এর মানে এটি কোন পণ্য নয়, প্রশিক্ষণের উপর নির্ভরশীল হলে অনেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে আপনার প্রতিষ্ঠানে আর কাজ করবে অন্য প্রতিষ্ঠানে। ক্রেতাদের পাশাপাশি আপনাকে লিডারদের প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে যেমনঃ লিডারদের আয়, বসার স্থান, টীম মিটিং বা আলোচনা করার সুযোগ প্রদান করতে হবে, আপনার নীতিমালা ও নিয়মাবলী এমন হওয়া উচিত হবেনা যেখানে পরিবেশকগণ লিডারদের প্রয়োজনীয়তা উপেক্ষা করতে পারে।
এমএলএম কোম্পানী যিনি গঠন করার সামর্থ্য রাখেন তিনি অবশ্যই ব্যবসা সম্পর্কেও ধারণা রাখেন। আপনি যখনই কোন গঠনমূলক কাজ করতে যাবেন তখন সামাজিক দ্বায়বদ্ধতার কথা স্মরণ রাখলে আপনার সাফল্য আসবেই। আপনি যতবেশী জানুননা কেন প্রতিটি পদক্ষেপ এর পূর্বে আপনার শুভাকাঙ্খিদের সুপরামর্শ নিন, যা আপনার ধারণার বাইরে ছিল তাও জানতে পারবেন এবং সমস্যার সঠিক সমাধান করতে পারবেন। সৎ ও যোগ্য মানুষদের আপনার প্রতিষ্ঠানে স্থান দিন আপনার বিজয় সুনিশ্চিত।
অধ্যায় সাত
সাফল্যের জন্য ডাউনলাইনে সঠিক তথ্য ও সৎপরামর্শ দিন
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় লিডার ও সিনিয়র পরিবেশকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে টীম গঠন, যোগাযোগ, প্রশিক্ষণ ও সেবা প্রদানে লিডারগণ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কোম্পানী বিপণন কার্যক্রমকে গতিশীল করার মাধ্যমে লিডাররা মূল কাজকে সহজ করে দেয়। আমাদের দেশে লিডারদের ভূমিকা অন্য দেশীয় কোম্পানীর চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী। যেমন ধরুন ‘ক’ নামক কোম্পানীর নিজস্ব কোন পণ্য নেই কমিশন প্লানও তেমন আকর্ষণীয় নয় এখন উপায় ‘লিডার’। কারন লিডারদের সাথে কোম্পানীর ব্যবস্থাপনার ‘সুসর্ম্পক’ থাকে এজন্য দেখবেন এসব কোম্পানী থেকে লিডাররা সরে গেলে কোম্পানীগুলো বেলুনের মতো চুপসে যায়। লিডার ও সিনিয়র পরিবেশকদের বর্তমান চিত্র ও করনীয় সর্ম্পকে নিন্মে লিখছি, এ লেখাগুলোকে নেতিবাচকভাবে না নেয়ার অনুরোধ করছি কারণ লিডার ও উদ্যোক্তাদের উপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের এমএলএম।
লিডাররা যা করেনঃ
ক) ক্রেতা বা পরিবেশকদের কার্যক্রম আরো বেগবান করার জন্য লিডাররা তাদের প্রেরণা দেয় ও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা প্রদান করে।
খ) কোম্পানীর তথ্যাদি ক্রেতা বা পরিবেশকদের প্রদান করে তবে সত্য ও মিথ্যেও প্রভেদটুকু বুঝতে দেয়না।
গ) অধিকাংশ লিডার মনে করেন তাদের ছাড়া কোম্পানী অচল এজন্য কোম্পানীর কাছ থেকে যাবতীয় বাড়তি সুবিধাগুলো নিতে চায়। অন্যদিকে পরিবেশকরা মনে করে লিডাররা তাদের পক্ষে কোম্পানীর সাথে যাবতীয় সুবিধা নিয়ে আলোচনা করে।
ঘ) কোম্পানীর দুর্বলতা কখনও লিডাররা পরিবেশকদের বুঝতে দেননা কারণ এতে নিজেদের ক্ষতিই বেশী মনে করেন।
ঙ) পরিবেশকদের ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য লিডাররা অনেক সময় ব্যস্ততা দেখায়।
চ) লিডাররা ভুলে যায় তাদের টীমে অনেক বেশী জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান পরিবেশক তার টীমে থাকতে পারে যারা কিনা সহজে অনেক কিছূ বুঝে নেয়। এজন্য অনেক ভাল লিডার ঝরে যায়।
ছ) হাল আমলে কিছু লিডারের নিকট থেকে ‘গেম খেলার’ কথা শুনা যায়, বিষয়টি অবশ্যই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে পরিবেশক ও ক্রেতাদের উপর। এমএলএম ব্যবসায় যারা গ্যাম্বলিং এর সন্ধানে থাকে তারা শুধু নিজেদের সর্বনাশ করছে না বরং পুরো সিস্টেমের সর্বনাশ করছে।
জ) অনেক লিডাররা নতুন নতুন কোম্পানীর সন্ধানে থাকে এতে নতুন করে সেটআপ দেয়ার সুযোগ পায় এবং নতুন কোম্পানীতে আপ-লাইনারদের ডাউনলাইনার করার সুযোগ থাকে।
লিডারদের যা করণীয়ঃ
1) ক্রেতা ও পরিবেশকদের সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান কোম্পানীর যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করা লিডারের দায়িত্ব।
2) টীম বা দলসমূহ যাতে নিয়মিত টীম মিটিং করে কার্যক্রম সচল রাখে এজন্য টীম লিডারদের সাথে সিনিয়র লিডারদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে।
3) লিডারদের অবশ্যই বিনয়ী হতে হবে। পরিবেশক বা ক্রেতাদের সমস্যা বা অভিযোগসমূহ সুন্দরভাবে নিষ্পত্তির মাধ্যমে লিডারগণ প্রত্যেকের আস্থা অর্জন করেন।
4) আজকে এক কোম্পানী আবার দুইদিন পর অন্য কোম্পানী এমন মনোভাব লিডারদের থাকা অনুচিত। আপনার এমন কাজের জন্য আপনার টীমের সদস্যদের নিকট আপনি স্বার্থপর বিবেচিত হবেন।
5) কখনো ক্রেতা বা পরিবেশকদের এড়িয়ে যাবেননা। আপনার সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে দিন। মনে রাখবেন হেল্পলাইন সবসময় লিডারদের ভাল ও উঁচু অবস্থানে দেখতে পছন্দ করে।
6) কোম্পানীতে কর্মরত প্রত্যেকে ক্রেতা-পরিবেশকের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে। আপনার টীমের ও টীমের বাইরের পরিবেশকরা আপনাকে অনুসরণ করবে। তাদের আপনার আপনার ডুপ্লিকেট করে তুলুন। তবে মনে রাখবেন আপনার শেখানো পথেই তারা হাঁটবে। ভুল পথ দেখাবেন নিজেই সমস্যায় পড়বেন।
7) কোন কিছু বাড়িয়ে বলতে যাবেন না কারণ বাড়িয়ে বলাটাও মিথ্যে, যেমনঃ অনেকে বলেন আমাদের কোম্পানীর মালিকের ঢাকায় ৫টি বাড়ী আছে প্রকৃতপক্ষে বাড়ীর সংখ্যা ১টি। আবার অনেকে বলেন আমাদের কোম্পানীর পরিবেশক সংখ্যা ৫লক্ষ মূলত আছে ২লক্ষ। এভাবে বাড়িয়ে বলা মিথ্যে, আজ না হয় কাল আপনার ডাউনলাইন বা প্রসপেক্ট যখন জানবেন তখন আপনার উপর তার বিশ্বাস শূন্যের কোটায় মেনে আসবে। মিথ্যের ফল কখনো ভাল হয় না।
অধ্যায় আট
ইতিবাচক মনোভাব সাফল্যের পথ তৈরী করে
ইতিবাচক মনোভাব ও নেতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ সম্পর্কে আমরা প্রত্যেকে কম বেশী অবগত। আরেকটু পরিষ্কার হওয়ার জন্য বলা যায় – ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ ধৈর্য্যশীল, আত্নবিশ্বাসী, নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন, পরের সাফল্যে সদা সন্তুষ্ট। অন্যদিকে নেতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ পরশ্রীকাতর, অহংকারী, নেতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ সব সময় সমালোচনা করার জন্যে প্রস্তুত থাকে, কারো সফলতাকে সহজভাবে মেনে নেয় না বরং বির্তকিত কথাবার্তায় জড়িত হয়। চার পাঁচজন লোকের কোন আলোচনা পর্যবেক্ষণ করলেই সহজে নেতিবাচক ও ইতিবাচক মানুষগুলোকে পৃথক করতে পারবেন। নেতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ কোন সমাধানে সন্তুষ্ট হননা, অন্যদের চেয়ে বেশী কথা বলতেই তাদের বেশী পছন্দ। অন্যদিকে ইতিবাচক মনোভাবের কিছু বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। যে কোন কাজে অন্যদের সহযোগিতা পাওয়া যায়। একজন ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ অনেকগুলো মানুষের মাঝে কর্মস্পৃহা তৈরী করতে পারে। বেশ কিছুদিন আগের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোর খবর নিত্য পড়ে আসছিলাম। এবার বেশ কিছু ব্যতিক্রম উদ্যোগ নজরে এলো যা অনেকেরই নজর কেড়েছে কয়েকটি এলাকার মানুষ নিজেদের উদ্যোগে প্রায় আট কি:মি: বাঁধ নির্মাণ করেছে। এমন নির্মাণের উদ্যোক্তা ও অংশগ্রহণকারীরা ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন যা সকলকে সংঘবদ্ধ হতে সাহায্য করেছে। আমাদের ইতিবাচক ভাবনা আমাদেরকে প্রাকৃতিক ঝুঁকি থেকেও রক্ষা পেতে সাহায্য করে এর প্রমাণ যথেষ্ট রয়েছে। প্রাপ্তি যত ক্ষুদ্র্র হোক না কেন ইতিবাচক মনোভাব ভবিষ্যতে বড় প্রাপ্তির জন্য প্রত্যাশা বাড়িয়ে তোলে। মানসিক গঠন যেমন হবে মনোভাব সেরুপ ফল প্রদান করবে। নেতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন মানুষ অতীতের কর্মকান্ড ও অবস্থাকে দায়ী করে। যেমন – বখে যাওয়া তরুণ তার পরিনতির জন্য মাতা পিতাকে দায়ী করে। ইতিবাচক মনোভাব সম্পন্ন তরুণ অতীতকে দায়ী না করে অতীতের ভুল- ভ্রান্তি হতে শিক্ষাগ্রহণ করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায়।
সমাজের অল্প শিক্ষিত মানুষ সমস্যা তৈরী করে বেশী। তারা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে অধিক মূল্যায়ন করে বেছে কাজ করতে চায়। পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও পরিবেশ থেকে শিক্ষাই মানুষের মনোভাব পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ইতিবাচক মনোভাব গঠনে আপনি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনঃ
® আপনি সর্বদা ভাল ও মঙ্গলজনক চিন্তায় মগ্ন থাকুন। একটি ভাল কাজ অন্যএকটি ভাল কাজের পথ তৈরী করে।
® সব শ্রেণী ও পেশার মানুষের সাথে সহজে মিশে যাওয়ার অভ্যাস করুন।
® পারিবারিক ও সামাজিক কাজে পূর্বের চেয়ে বেশি অংশ গ্রহণ করুন।
® সব সময় সৃষ্টিশীল কাজে ব্যস্ত থাকুন।
® অন্যের সাফল্যে উৎসাহিত করুন, এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা দিন।
® আপনার অধঃস্তন ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সুসর্ম্পক বজায় রাখুন। সময় ও কাজের প্রতি গুরুত্ব দিন।
® নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন মানুষগুলোকে এড়িয়ে চলুন যতটা সম্ভব।
® নিজের ভুলের জন্য অনুশোচনা করুন। পূনরায় ভুল না করার জন্য সর্তক থাকুন।
® কাজ দ্রুত শেষ করার অভ্যাস করুন। দীর্ঘসূত্রীতা নেতিবাচক মনোভাবের জন্ম দেয়।
® অন্যের সমালোচনা থেকে বিরত থাকুন। অন্যেরভুল সহজভাবে দেখিয়ে দিন।
® যারা সমাজ ও দেশের অকল্যাণ করছে তাদের বাধা দিন। কারন তারা এখন অন্যের ক্ষতি করছে। আগামী দিন আপনারও ক্ষতি করবে নিশ্চিত।
যে কোন কাজে সফলতার জন্য ইতিবাচক মনোভাব বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে যা শতভাগ সত্য। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় জড়িত সকল লিডার ও ডিষ্টিবিউটর ইতিবাচক মানসিকতা ধারন করে পরিবেশ থেকে শিখে এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। অর্থনৈতিক স্বনির্ভর হয়ে উঠার জন্য ইতিবাচক এমএলএম পরিবেশ অপরিহার্য।
অধ্যায় নয়
বাইনারী ম্যাজিক ও পদ্ধতি বিশ্লেষণ
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে যে সব কমিশন প্লান জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তার মধ্যে বাইনারী প্ল্যান অন্যতম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নেটওর্য়াক মার্কেটিং বলতেই অধিকাংশ মানূষ মনে করে বাইনারী প্ল্যান। বিশ্বের খ্যাতনামা অনেক প্রতিষ্ঠানই ব্যালেন্স বাইনারী কিংবা পেয়ার বাইনারী অনুসরণ করে যদিও আমাদের দেশে বিভিন্ন কোম্পানিগুলো ভিন্ন ভিন্ন লেভেল কমিশন প্রদানের মাধ্যমে ভিন্ন মাএার বাইনারী প্ল্যান গঠন করে যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সাধারণ বাইনারী প্ল্যানে দুইটি পক্ষ থাকে যেমন- বামপক্ষ ও ডানপক্ষ। একজন ডিস্ট্রিবিউটর তার ডাউনে নতুন দুজনকে স্পন্সর করাতে পারে। অনুরুপভাবে প্রত্যেকে 1´1, 2´2, 4´4 এভাবে স্পন্সর করাতে থাকে। কমিশন প্রদানের ক্ষেত্রে পয়েন্ট বা পন্যের মূল্য অনুযায়ী এক একটি প্রতিষ্টান এক একটি নিয়ম অনুসরণ করে। যে সব সুবিধাসমূহ বাইনারী পদ্ধতি হতে পাওয়া যায় তা হলো:
ক) বাইনারী পদ্ধতিতে একে অন্যের হাত ধরে আসে। একের অর্জিত পয়েন্টে অন্যদের কাজে আসে।
খ) সাধারণত অন্য কমিশন প্ল্যান গুলোতে নির্দিষ্ট লেভেল পর্যন্ত কমিশন লাভ করে বিধায় এসব প্ল্যানে আপলাইনরা নির্দিষ্ট লেভেলের পর ডাউনলাইনদের খুব একটা খোঁজ নেয় না অন্যদিকে বাইনারী প্ল্যানে টপ লেভেল হতে বটম লেভেল পর্যন্ত প্রত্যেক ডিস্ট্রিবিউটর একে অন্যের সাথে রিলেশন বজায় রাখে।
গ) বাইনারী প্ল্যানে পণ্য ও স্পন্সরিং এর উপর গুরুত্বারোপ করে বিধায় পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন ক্রম বৃদ্ধি পায়।
ঘ) বাইনারী পদ্ধতিতে এক বা একাধিক বিজনেস গঠন করে অধিক আয় করা যায়। যেমন- একটির পরিবর্তে তিনটি বা সাতটি সেন্টার নেওয়াকে Multi Center Bainary বলা হয়। এক্ষেত্রে একজন ডিস্ট্রিবিউটর অনেকগুলো হাতে একসাথে কাজ করতে পারে। ফলে ব্যালেন্সিং হলেও যে কোন সেন্টারে আয় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ঙ) এ পদ্ধতি সহজ ও সাপ্তাহিক কমিশন প্রদান করে বিধায় এটি সকলের নিকট গ্রহন যোগ্যতা পায়।
চ) বাইনারী প্ল্যানে ইচ্ছে করলেই অতিরিক্ত হাত (বাম পক্ষ বা ডান পক্ষ ব্যতীত) বাড়ানোর সুযোগ নেই। নতুন কাউকে স্পন্সরিং করতে চাইলে ডাউন লাইনের ডাউনেই করতে হয়। এজন্য আপ-লাইন ও ডাউন লাইনারদের মাঝে সম্পর্ক গভীরতর হয়।
বাইনারী প্ল্যানে যে কোন ডিস্ট্রিবিউটর সহজে বুঝতে পারে এবং স্বপ্ল সময়ে সাফল্যর্জনে সক্ষম হয়। এ পদ্ধতিতে বিক্রয়ের চেয়ে স্পন্সরিং বা নতুন ক্রেতা অন্তভূক্তি অধিক ফলপ্রসূ। বাইনারী পদ্ধতিতে যে সব বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া উচিত তা হলো।
ক) নিয়মিত প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও নিজ নিজ গ্রুপের তত্ত্বাবধান।
খ) ডাউন লাইন ডিস্ট্রিবিউটরদের ডুপ্লিকেট করে গড়ে তোলা। কারণ প্রত্যেকের ডাউনে দু’জন সক্রিয় নেটওয়ার্কারই যথেষ্ঠ।
গ) বাইনারী পদ্ধতির সাথে ব্যালেন্সিং বিষয়টি জড়িত। এজন্য প্রত্যেকের ডাউনে দু’জনকে স্পন্সর করানো ছাড়াও নতুন ডিস্ট্রিবিউটর সাইন আপ করা প্রয়োজন হয়। বিশেষজ্ঞ যখন যে কোন এক পার্শ্বের কেউ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
ঘ) ডাউন লাইনে যারা স্পন্সরিং-এ ব্যর্থ হয় তারা ব্যক্তিগত বিক্রয় বা গ্রুপ সেলস/দলীয় বিক্রয়ের মাধ্যমে যাতে কমিশন লাভে সমর্থ হয় সেই বিষয়ে আপলাইন লিডারদের লক্ষ্য রাখা বাঞ্চনীয়।
ঙ) যারা মনে করে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর নিজের নেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলবে তারা ভূলের মধ্যে আছে। নিয়মিত পরিচর্যা ব্যতীত যে কোন নেট অল্প সময়ের মধ্যে দূর্বল হয়ে পড়ে।
বাইনারী ম্যাজিক হলো এর দ্বারা অতিঅল্প সময়ে বিশাল আকৃতির টীম গঠনে সক্ষম। সফলতা নির্ভর করে কে কতটা ব্যালেন্স করে এগোতে পারে।
অধ্যায় দশ
‘ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইন’ কি এমএলএমআইন তৈরীতে সহায়ক হবে ?
১লা এপিল ২০০৯, সংসদে পাস হলো ‘ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইন’। এখনো পর্যন্ত এ আইনের প্রয়োগ তেমন দেখা না গেলেও খুব শীঘ্রই এর কার্যকারিতা হবে বলে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি। প্রথমেই একটি বিষয় বলে রাখছি তা হলো যদিও ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইনে এমএলএম প্রতিষ্টানের বিষয় স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি তবু এ আইনে এমএলএম প্রতিষ্টানগুলো পড়ে কারন এসব প্রতিষ্টান পণ্য ক্রয় বিক্রয় ও মজুদের সাথে জড়িত। তবে আমরা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারি যে শীঘ্রই এমএলএম আইন তৈরী হবে এবং যা ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইনের সাথে অবশ্যই সংগতিপূর্ণ হবে। শূরুতেই ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইন সর্ম্পকে কিছু ধারনা লাভের চেষ্টা করি। আইন অনুযায়ী, নগদে বা বাকীতে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে ভোক্তা বা ক্রেতাদের ঠকালে শাস্তি পাবে বিক্রেতারা যেমন ওজনে কম দেওয়া, দাম বেশি রাখা, মেয়াদো্ত্তীর্ণ মালামাল বিক্রি করার মতো অপরাধের জন্য অর্থদন্ড বা কারাদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন দোষী বিক্রেতা। দোষীদের সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল এবং দুই লাখ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে এই আইনে। ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণ, ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্য প্রতিরোধ ও তৎসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে বিধানের জন্যই এই আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এই আইনের আওতায় ভোক্তা অধিকারবিরোধী উল্লেখযোগ্য অপরাধগুলো হচ্ছেঃ
- নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোনো পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রি করা বা বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া;
- অবৈধভাবে কোনো পণ্য বা ঔষধ মজুদের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো;
- জ্ঞাতসারে ভেজাল পণ্য বা ওষধ বিক্রি করা বা বিক্রির প্রস্তাব করা;
- খাদ্যপণ্যের সঙ্গে স্বাস্থ্যহানিকর পণ্য মিশিয়ে বিক্রি করা বা বিক্রির প্রস্তাব করা;
- পণ্য বা সেবার অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতাদের প্রতারিত করা;
- ওজনে কম দেওয়া বা কম সরবরাহ করা;
- বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্র সঠিক না থাকা;
- নকল পন্য বা ঔষধ প্রস্তুত বা উৎপাদন করা;
- মেয়াদ উত্তীর্ণ পন্য বা ঔষধ বিক্রি করা বা বিক্রির প্রস্তাব করা;
- একচেটিয়া ব্যবসার মাধ্যমে অন্যায্য মুনাফা অর্জন করা;
- পণ্য বা সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কোনো কাজ করা।
কোনো ভোক্তা যদি মনে করেন, বিক্রেতা ভোক্তার অধিকারবিরোধী কাজ করেছেন, তাহলে তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর বা সরাসরি আদালতে অভিযোগ করতে পারবেন। তবে ঘটনার ১০দিনের মধ্যে মহাপরিচালক কিংবা অধিদপ্তরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ না করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। ভোক্তা অধিকার খর্ব করলে পণ্য বা সেবার সংশ্লিষ্ট বিক্রেতা বা উৎপাদকের বিরুদ্ধে যেসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে তাহলোঃ
* ধার্যকৃত মূল্যের চেয়ে বেশী দামে পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রি বা বিক্রির প্রস্তাব করলে এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড।
* অবৈধভাবে পণ্য বা ঔষধ মজুদ করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে দাম বাড়ালে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড।
* ভেজাল জিনিস বিক্রি করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড।
* খাদ্যদ্রব্যে স্বাস্থ্যহানিকর উপাদান মেশালে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড।
* পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন মাধ্যমে ভোক্তাকে প্রতারিত করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড।
* যে জিনিস সরবরাহ করার কথা হুবহু সে জিনিস বা সেবা না দিলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড।
* প্রতিশ্রুত ওজন অপেক্ষা কম দিলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড।
* দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্টানে ওজন পরিমাপের বাটখারা বা ওজন পরিমাপক যন্ত্র সঠিক না থাকলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড।
* নকল পণ্য প্রস্তুত বা উৎপাদন করলে তিন বছর কারাদন্ড বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড।
* মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বা ঔষধ বিক্রি বা বিক্রির প্রস্তাব করলে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার লাখ টাকা অর্থদন্ড।
* বিধিনিষেধ অমান্য করে সেবা গ্রহীতার জীবন বা নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে এমন কাজ করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড।
* সেবা প্রদানকারীর অবহেলা, দায়িত্বহীনতা বা অসর্তকতায় সেবা গ্রহীতার অর্থ, স্বাস্থ্য বা জীবনহানি ঘটলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড, বা অনধিক দুই লাখ টাকা অর্থদন্ড।
* আইনি বাধ্যবাধকতা অমান্য করে দোকান বা প্রতিষ্টানের সেবার মূল্য তালিকা প্রর্দশন না করলে এক বছর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদন্ড।
এখানে উল্লেখ্য যে , আমরা ভোক্তারা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হই অস্থিতিশীল বাজার দ্বারা, সরকার বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেও এর সঠিক বিহীত করতে পারছেনা। অনেকগুলো কারণের একটি হলো সাধারন ক্রেতা বা ভোক্তাদের সচেতনতা। ভোক্তা আইনের সঠিক প্রয়োগ ও সাধারন মানুষের এ আইন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি না হলে ফলপ্রসু করতে সময়সাপেক্ষ হবে।
এমএলএম শিল্পে সঠিক নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা এখন সময়ের দাবী মাত্র। দেশের প্রশাসন এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব তেমন না করলেও ভোক্তা বা ক্রেতা, ডিষ্টিবিউটর ও নেটওয়ার্কারদের স্বার্থে এমএলএম আইন প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। দেশের আনাচে কানাচে গড়ে উঠা এমএলএম বা নেটওয়ার্ক মাকের্টিং প্রতিষ্টানসমূহ নিয়ন্ত্রনের কোন সংস্থা প্রতিষ্টিত হয়নি যা আমাদের জন্য খুবই হতাশাজনক। যার ফলে কিছু ভুয়াঁ প্রতিষ্টান নেটওয়ার্ক মাকের্টিং এর কথা বলে সাধারন ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা আত্নসাত করার কাজে লিপ্ত। এসব প্রতিষ্টানসমূহ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব অবৈধ ব্যবসা করার সুযোগ পায়। যেসব প্রতিষ্টানের কারনে এমএলএম ব্যবসার প্রতি সাধারন মানুষের আস্থা নষ্ট হচ্ছে। বেকার সমস্যায় র্জজরিত এদেশের লক্ষ লক্ষ যুবকের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হইবার পরও এখনও অসংখ্য যুবক নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্টান খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্টানই অল্প সময়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনে চেষ্টায় ব্যস্ত। ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন হওয়ায় আমরা কিছুটা হলেও আশ্বস্ত এজন্য যে এ আইনটি এমএলএম বা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং প্রতিষ্টানসমূহকে এর আওতায় নিয়ে আসবে। পাইকারী বাজার থেকে পণ্য কিনে এমএলএম এর কথা বলে বিক্রয় করা, স্বপ্ল মূল্যের পণ্য অধিক দামে বিক্রয়ের প্রবণতা ইত্যাদি কমবে। কমিশন লাভের প্রলোভন দেখিয়ে পণ্য মজুদ করানো। এসব বন্ধের অন্যতম উপায় সাধারন ডিষ্টিবিউটরদের সচেতনতা। সাধারন ডিষ্টিবিউটররা সচেতন না হলে এ ধরনের ভূয়াঁ নেটওয়ার্ক মাকের্টিং প্রতিষ্টান গড়ে উঠবেই। আইনি ব্যবস্থা গ্রহণই এদের কাছ থেকে বেকার যুবকদের রক্ষার একমাত্র উপায়। আমরা খুবই আশাবাদী যে ভোক্তা স্বার্থ সংরক্ষণ আইন এর পাশাপাশি এমএলএম আইন প্রণয়ন করে দেশের এমন একটি শিল্পকে বাচাঁতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
অধ্যায় এগার
সাফল্যের জন্য চাই অধ্যবসায়, কর্মপরিকল্পনাও কঠোর পরিশ্রম
দীর্ঘ আঠার থেকে বিশ বছর শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে যখন কেউ আরো দু’চার বছর ঘুরে একখানা ভাল চাকুরী জোটাতে সমর্থ হয় না তাদের কাছে ‘সাফল্য’ শব্দটির পরিবর্তে সাধারণভাবে বেঁচে থাকাই স্বপ্ন মনে হয়। অন্যদিকে মাত্র পাঁচ-সাত বছরের শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে অধ্যবসায়, অভিজ্ঞতা ও কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে সাফল্যের সাথে অর্জন করেন শিল্পপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইত্যাদি পদবী, আপনার শুরু যেখান থেকেই হোক না কেন সাফল্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন অধ্যবসায়, কর্মপরিকল্পনা ও কঠোর পরিশ্রম। কথায় আছে অধ্যবসায় সাফল্যের চাবিকাঠি। আপনার পেশা যাই হোক না কেন আপনাকে প্রথমেই অধ্যবসায়ের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে, চাকুরীতে সমস্যা সৃষ্টি হলেই তা দ্রুত পরিবর্তনের ভাবনা মাথায় না এনে সমস্যা মোকাবেলার মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে। অনুরূপভাবে ব্যবসায় সাময়িক ক্ষতির সম্মুখীন হলে তা ধৈর্য্য সহকারে মোকাবেলা করতে হবে। সাফল্য লাভের জন্য অধ্যবসায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি গুরুত্বপূর্ণ কর্মপরিকল্পনা কারন কর্মপরিকল্পনা ব্যতীত সুষ্ঠভাবে কাজ সম্পাদন সম্ভব হয় না। পরিকল্পনা বিহীন কাজ অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়ার মতই। যতটুকু সম্ভাবনা থাকে সফল সম্পাদনের তার চেয়ে বেশি সম্ভাবনা থাকে ব্যর্থ হওয়ার।
অনেক ক্ষেত্রে সুপরিকল্পিত কাজ সময়সাপেক্ষ হলেও তা সফল হয় বেশি। যতটুকু ঝুঁকি বহন করতে সক্ষম ততটুকু ঝুঁকি গ্রহণ সুষ্ঠ পরিকল্পনার অংশ বিশেষ। অনুরুপভাবে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য সুপরিকল্পিত উপায়ে এগোতে হবে। সফলতার অন্য এক পূর্বশর্ত পরিশ্রম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিশ্রমের বিকল্প নেই। পরিশ্রম ব্যতীত ভোগ তখনই সম্ভব যখন উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের প্রাচুর্য থাকে কিংবা কোটি টাকার লটারী জয় করা যায়।
কাজ যেমনই হোক না কেন ফলপ্রসু করতে চাই অধ্যবসায়, সুপরিকলল্পনা ও কঠোর পরিশ্রম। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে সফলতা লাভের জন্য অধ্যবসায় ও পরিশ্রমের বিকল্প নেই। ফুলটাইম নেটওয়ার্ককারগণ সাধারণত বিনিয়োগ ঝুঁকি ছাড়াই দীর্ঘমেয়াদী আয়ের সুযোগ পায়, প্রয়োজন অধ্যবসায় ও কঠোর পরিশ্রম। শুরুতে পার্টটাইম সময় দিয়ে ধীরে ধীরে ফুলটাইম সময় প্রদান করে অনেকেই এ ব্যবসায় সফল হয়েছেন। অধিক সময় প্রদানের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রদেয় সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগানো। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে এমন অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে নেটওয়ার্কারগণ স্বল্প সময়ে রয়েলটি আয় নিশ্চিত করেছেন। এসকল দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আমরাও সফলতা অর্জন করতে অক্ষম হতে পারব। কেউ এমন মনে করার কোন কারন নেই যে যারা আগে কোম্পানীতে জয়েন করেন তারাই এগিয়ে থাকে, এটা সত্য যে যারা পরিকল্পিত উপায়ে প্রথম থেকেই কাজ করে তারা এগিয়ে থাকে কিন্তু অনেক পরে ব্যবসা আরম্ভ করেও অনেকেই সবোর্চ্চ আসন লাভ করে। নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় তারাই জয়ী হয় যারা ব্যবসাটিকে মনে প্রাণে গ্রহণ করেছে। বিনয়ের সাথে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে, পরিশ্রম করার মানসিকতাও থাকতে হবে। যদি মনে করেন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং ব্যবসায় সহজেই সবকিছু হয়ে যাবে তবে তা অসত্য। অন্যান্য বিষয়ের মতো তীব্র বাসনা ও অধ্যবসায় আপনাকে সাফল্যের সিংহাসনে বসাবে। অবশ্যই আপনাকে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর সমগ্র বিষয়বস্তু বিস্তারিত জেনে এগোতে হবে।
অধ্যায় বার
মাল্টিলেভেল মার্কের্টিং পদ্ধতিতে হারবালপণ্যের সম্ভাবনা
মাল্টিলেভেল মার্কেটিং পদ্ধতিতে হারবাল পণ্য ও ঔষধ সামগ্রী সবচেয়ে সম্ভাবনাময় একটি খাত। বিশ্বের মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কিংবা নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানীগুলোর অধিকাংশই হারবাল পণ্য সামগ্রী এবং ফুড সাপ্লিকেন্ট্স বাজারজাত করে। এসব প্রতিষ্টান জীবনরক্ষাকারী ঔষধ ও পথ্য বিপণনের পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির দরুন বাজারের অধিকাংশ শেয়ার নিয়ন্ত্রণ করছে। একারণে এসব প্রতিষ্ঠানের কমিশন প্ল্যান যেমনই হোক না কেন বাজারে তাদের অবস্থান বরাবরই ভাল।
বর্তমানে আমাদের দেশেও বেশ কিছু এমএলএম প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এবং অধিকাংশই ঔষধ, হারবাল পণ্য ও প্রসাধনী এবং খাদ্য সামগ্রী বাজারজাত করছে। আমাদের দেশে বরাবরই হারবাল পণ্যের চাহিদা ছিল কিন্তু সঠিক বিপণন কৌশলের কারণে এর বাজার ভালভাবে গড়ে উঠেনি। এছাড়াও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নকল ও ভেজাল ঔষধ বাজারজাত করে সাধারণ ক্রেতাদের হারবাল পণ্যের প্রতি আস্থা নষ্ট করে।
এখনও যে পরিমাণ চাহিদা রয়েছে হারবাল কিংবা ঔষধি পণ্যের তা ধরে রাখার জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এমনই একটি পরিকল্পনা ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বলতে পারেন মাল্টিলেভেল মার্কেটিং। তবে ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য পণ্যের মান কমিয়ে ডিস্টিবিউটরদের অধিক কমিশন প্রদানের প্রচেষ্টা অনেকটা আত্নঘাতী। কমিশনের পরিমাণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ এর চেয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করতে হবে পণ্যের গুণগত মানের উপর। কারণ উৎপাদনমূখী প্রতিষ্টানের প্রথম লক্ষ্য থাকে বেশী পণ্য সেল্স।
ভোক্তাদের প্রথম পছন্দ উন্নতমানের পণ্য আর বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা তাদের অনুপ্রানিত করে। এজন্য দু’ধরনের ডিষ্টিবিউটর আমরা এ ধরনের প্রতিষ্টানে দেখতে পাইঃ
১। গুণগত মানের পণ্যের ক্রেতা যারা বাড়তি আয়ের প্রতি কিঞ্চিৎ আগ্রহী হয়।
২। চাকুরীপ্রার্থী যারা পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে উর্পাজন করে।
পণ্যের মানের সাথে সংঙ্গতি রেখে মূল্য নির্ধারন না করলে ধীরে ধীরে পণ্যের ক্রেতা হারাতে হয় এবং ফুলটাইম ডিষ্টিবিউটরগণ বাজার প্রতিযোগীতার মুখোমূখী হয়। যেহেতু এখনও আমাদের দেশে এমএলএম তেমন প্রচার ও প্রসার লাভ করেনি সেহেতু অধিকাংশ ডিষ্টিবিউটর এক কোম্পানী থেকে অন্য কোম্পানীতে ব্যবসারম্ভ করার আগ্রহ দেখায়।
যেসব প্রতিষ্টান দীর্ঘদিন সুনামের সহিত ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এমন প্রতিষ্টান এমএলএম পদ্ধতি অনুসরণ করলে সাধারন ক্রেতা / ডিষ্টিবিউটরগণের কোম্পানী পরিবর্তন হার কম হয়। অন্যদিকে ফুলটাইমাররা সুনাম অর্জনকারী প্রতিষ্টান আকঁড়ে ধরে রাখে সাফল্যের জন্য। যে সম্ভাবনার কথা বল্ছি তা হারবাল পণ্যকে দেশের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি বিদেশি বাজারে প্রবেশের সুযোগ করে দিবে। হার্বালাইফ ইন্টারন্যাশনাল, ইউজানা ও নিউস্কীন এন্টারপ্রাইজ ইত্যাদি অসংখ্য প্রতিষ্টান হারবাল পণ্য ও ঔষধ-পথ্য এমএলএম পদ্ধতিতে বাজারজাত করে বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জনে সক্ষম হয়েছে। দেশে এমএলএম নীতিমালার পাশাপাশি হারবাল ও ঔষধী পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্টানসমূহ গুনগত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য নিজেদের মধ্যে স্বমন্বয় গড়ে তোলতে হবে। সম্ভাবনার আলোটুকু ধরে রাখার জন্য এমএলএম কোম্পানী, নেটওর্য়াকার, ডিষ্টিবিউটর ও সাধারন ক্রেতাদের একসাথে কাজ করতে হবে। ভালো প্রতিষ্টানগুলোকে বিভিন্ন সরকারী সুবিধা (যেমন ট্যাক্স হলিডে, ঋণ সুবিধা ইত্যাদি) প্রদান করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সুস্থ সমাজ ও জাতীয় উন্নয়নে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দিতে হবে।
অধ্যায় তের
আপনার পছন্দের তালিকায় দেশীয়প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাধান্য দিন
পৃথিবীতে আমরাই একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি। আমরাই একমাত্র জাতি যারা লাঙ্গল ধরা হাত দিয়ে অস্ত্র ধরে দেশকে স্বাধীন করেছি। দেশের প্রতি ভালবাসার অনন্য উদাহরণ রেখে গিয়েছেন আমাদের পূর্ব প্রজন্মরা কিন্তু আমাদের মধ্যে সেই ভালবাসা আর দেশপ্রেম নেই বললেও চলে। আমাদের জন্যই দেশ আর দেশের জন্যই আমরা। দেশকে নিয়ে ভাবতে হবে সবার আগে। আমার আর আপনার প্রতিটি কাজে দেশের কথা স্মরণ করলে দেশের কল্যাণ হবে, সমাজের কল্যাণ হবে এবং পরিবারের কল্যাণ হবে। যেহেতু আমার লেখাটাই মূলত নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কেন্দ্রিক এজন্য কিভাবে ও কেন দেশীয় এমএলএম কোম্পানীগুলোকে প্রাধাণ্য দিব সে বিষয়ে এখন লিখছি। বেশ কিছু এমএলএম (বিদেশী) কোম্পানী বর্তমানে আমাদের দেশে কাজ করছে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য ইতিবাচক দিক কারণ দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বা বাণিজ্য না হলে দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যহত হয়। বিদেশী কোম্পানীগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় অবর্তীণ হয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মান উন্নয়ন করে এবং টিকে থাকার জন্য লড়াই করে। আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি এমএলএম শিল্পের বিগত ৮-১০ বছর পূর্বের অবস্থা ও বর্তমান অবস্থা। এমএলএম শিল্পের পরিবর্তনের পাশাপাশি একজন পরিবেশক, নেটওয়ার্কার বা লিডার হিসেবে আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে, এ দায়িত্বটুকু সামাজিক দায়বদ্ধতা কিংবা দেশের প্রতি কর্তব্য ধরে নিতে পারেন। লক্ষ্য করে দেখুন গত কয়েক বছর আগেও ডলার এতো সহজ ছিলনা আমাদের জন্য এখন যতটা সহজ। এগুলোর নাম হলো ভার্চুয়াল ডলার, ইন্টেলেকচুয়্যাল ডলার ইত্যাদি। টাকা দিবেন ডলার পাবেন আবার ৪০০ টাকা দিয়ে টুথপেস্ট কিনবেন ডলার ইনকাম করবেন। যেহেতু আপনাকে ডলার কামাতে হবে এজন্য অতিমূল্যবান! টুথপেস্ট বিক্রয় করতেই হবে- ‘সামর্থ্য না থাকলে একবেলা ভাত কম খাবেন তবুও এই অতিমূল্যবান টুথপেস্ট আপনার প্রয়োজন’। নেটওর্য়াক মার্কেটিংকে এতো জটিল করে নেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বিবেক দিয়ে অনুধারন করুন আপনি যা করছেন তা সঠিক কিনা তবেই সফল হবেন। কখনো অন্যের দায় কাঁধে নেবেননা, অন্যের নিকট দায়বদ্ধ হয়ে যখন ঋণী হয়ে যাবেন তখন নিজেকে আড়াল করতে মূল সড়ক ছেড়ে অলি-গলিতে হেঁটে বেড়াবেন। ডলার, পাউন্ড কিংবা রিঙ্গিতের পেছনে ছুটার প্রয়োজন নেই। কেউ আপনাকে মাসে ১ কোটি টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখালেই ছুটে যাবেন না কারণ তারা ‘কইয়ের তেলেই কই ভাঁজবে’। ছুটবেন পদ্ধতির পেছনে, ছুটবেন মানসম্মত পণ্যের পেছনে (তবে অবশ্যই পণ্যটির মূল্য হবে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে)। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসার সুযোগ দিন, আপনার পছন্দের তালিকায় প্রথমে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাখুন, এটি আমাদের কর্তব্য। আমাদের আন্তরিকতা আর দৃঢ়তা থাকলে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপি সুনাম কুড়াতে পারবে। এতে পরিবেশকদের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশী।